শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৯

মুসলিম জঙ্গি বনাম ইসলাম বনাম ভূরাজনীতি

শ্রীলঙ্কায় বিগত ২১.০৪.২০১৯ তারিখ, রোববার গির্জা, হোটেলসহ আটটি স্থানে নৃশংস বোমা হামলায় মৃত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে এখন পর্যন্ত ২৫৩–এ পৌঁছেছে, আহত হয়েছে অন্তত পাঁচ শতাধিক। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট ও তাদের উপদল ন্যাশনাল তৌহিদী জামায়াত, জামিয়াতুল মিল্লাতু ইবরাহিম ঘটনার তিন দিন পর তাদের মুখপাত্র আমাকের মাধ্যমে হামলার দায় স্বীকার করেছে। বরাবরের মত একটি নির্দিষ্ট অক্ষ ঘটনাটি আইএস দ্বারা সংগঠিত বলে বিশ্ববাসীকে মুসলিম মানেই সন্ত্রাস নামটি কায়েম করার সুদূরপ্রসারী চেষ্টা চলছে এবং বিশ্ববাসীকে বোকা বানাতে চাচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী ‘ইসলামী(নামধারী) শাসনব্যবস্থা’ কায়েমের আদর্শে মত্ত আইএস যে ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সৃষ্টি তা এখন অজানা নয়। নামধারী মুসলমান (খারেজী) জঙ্গিগোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রত্যেকেই মোসাদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। আইএস-সহ যত মুসলিম জঙ্গি সংগঠন আছে এদের মূল নেতৃত্ব রয়েছে কোন না কোন খারেজী অনুসারী। জ্ঞাতার্থেঃ এই খারেজীরা ছিল একটি ইহুদি সম্প্রদায় যারা ইসলামের ঊষালগ্নে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং পরবর্তীকালে মুসলমান ও অমুসলিম উভয়কেই হত্যা করতে থাকে৷ ইসলামের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় হযরত ওসমান (রাঃ) ও হযরত আলি (রাঃ) কে জাহরান হাশিম এবং আবু মোহাম্মেদের মতো খারেজীরাই হত্যা করে।
চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে, দুনিয়াব্যাপী ‘ইসলামী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে স্বঘোষিত খলিফা ও সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা খলিফা আবুবকর আল বাগদাদি মুসলমান নন। তিনি একজন ইহুদি। তার আসল নাম আকা ইলিয়ট শিমন। আইএস প্রধান বাগদাদিকে ৭ বছর ট্রেনিং দিয়েছে ইজরায়েল। ইজরায়েল গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদে কর্মরত এক ইহুদি নারী গুপ্তচরকে বিয়ে করেছিল। বাগদাদির পরিচয় সম্পর্কে ছড়ানো হয়েছে তিনি ১৯৭১ সালের ২৮ জুলাই ইরাকের সামারায় জম্মগ্রহণ করেন। বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণের সময় সামারায় ছদ্মবেশে একটি মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করেন বাগদাদি। পরে তিনি ‘আমিরে দায়েশ’ উপাধি গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে, ২০০৪ সাল থেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে আবুবকর আল বাগদাদি।
২০১৩ সালের জুনে সুসংগঠিত এ জঙ্গিগোষ্ঠীটি ‘ইসলামিক স্টেট’ নামে আত্মপ্রকাশের আগে বাগদাদী যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের সিনিয়র সিনেটর ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী জন ম্যাককেইনের সঙ্গে তার অর্ধডজন শীর্ষ জঙ্গিসহ গোপন বৈঠক করেন। তখন বাগদাদির মুখে লম্বা দাড়ি ছিল না। ওই বৈঠকে বাগদাদির সহযোগী আইএসের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোহাম্মদ নূরও উপস্থিত ছিলেন। গোড়ার দিকের ওই গোপন বৈঠকগুলোতে মোসাদের বেশ কয়েকজন সদস্য ও আইএসপ্রধান বাগদাদি উপস্থিত ছিলেন। মার্কিন প্রচারমাধ্যম এবিসি নিউজ ও সিএনএনের একটি ভিডিও স্নাপশটে এ ছবির ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া গেছে।অতপর ২০১৩ সালে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ দখলে নিয়ে ইসলামিক স্টেট নাম দিয়ে খেলাফত ঘোষণা করেন বাগদাদি (সুত্রঃ রেডিও আজিয়াল ডটকম, সোশিও-ইকোনমিক হিস্ট্রি, গ্লোবাল রিসার্চ, এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) গোপন নথি, পলিটিসাইট ডটকম, উইকিলিক্স, আমেরিকান ফ্রি প্রেস।)।
এটপরও অনেকে আইএস বলতে মুসলিমদের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করেন বা প্রপোগন্ডা চালান তাদের নিকট নিন্মোক্ত প্রশ্নসমূহঃ-
(০১) যেখানে সারা পৃথিবীতে ইসলামের নামে বোমা হামলা চালাচ্ছে আইএস, অথচ মসজিসমূহকে নাইট ক্লাব বানানর পরও জানালার পাশে "ইজরায়েল"কে তারা কেন হামলা করে না?
(০২) আইএস যদি সত্যিই মুসলমানদের সৃষ্টি হয় তবে তারা ফিলিস্থিনিদের পক্ষে তারা কেন তৎপর নয়?
(০৩) আমেরিকার কর্তৃক জেরুজালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী ঘোষণার পরও তারা কেন সে দেশের উপর হামলা করে না?
(০৪) আইএস জঙ্গিরা যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের হাজার হাজার মসজিদ মাদ্রাসা ধ্বংস করে শেষ করে ফেলেছে সেখানে কেন তারা একটাও পুনর্নির্মাণ করেনি?
(০৫) মুসলিমদের জঙ্গি সাজিয়ে কারা ট্রিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বাণিজ্যসহ আরব বিশ্বের তেল-সোনা কে বা কারা চুরি করছে এবং অপছন্দের ব্যাক্তিদের বেছে বেছে ক্ষমতাচ্যুত করেছে বা করছে?
(০৬) স্যামুয়েল হান্টিংটনের দ্য ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন থিওরীর আগে কোন মুসলমানের আত্মঘাতি বোমা হামলার প্রয়োজন হয়নি কেনো?
(০৭) যেখানে শ্রীলঙ্কায় হামলার ১০দিন আগে সিআইএ ও "র" সতর্ক করে ছিল এবং হামলা কারা করবে তাও বলে দিল তবুও তার বিরুদ্ধে কেন চুপ ছিল শ্রীলংকা সরকার (উল্লেখ্য পুলওয়ামা হামলা, হোটেল তাজ হামলা, মুম্বাই হামলা, রাজিব গান্ধি হত্যা, ইন্দিরা গান্ধি হত্যা করার মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ব্যাপারে ভারত কোনও দিনই নিজে দেশের কোন হামলার ব্যাপারে আগাম জানতে পারেনি)।
(০৮) ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরই কেন আইএস ফ্রান্সে দুইবার সন্ত্রাসী হামলা চালালো?
(০৯) জাপান ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরই কেন দুই জাপানি অপহৃত হলো ও আইএস তাদের হত্যা করলো?
(১০) ইন্দোনেশিয়া ফিলিস্তিনের গাজায় একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার পরই কেন আইএস জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম এই মুসলিম রাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা চালালো?
(১১) ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বেলজিয়াম একটি বৈঠকের আয়োজন করার পরই কেন আইএস ইউরোপের এই দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলা চালালো?
(১২) রাশিয়ার সহায়তায় বাংলাদেশ পরমাণু প্রকল্প থেকে ২০১৬ সালের ২১ জুন ‘স্থান সনদ’ বা সাইট লাইসেন্স পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে কেন গুলশানে হামলা হলো ফলশ্রুতিতে আর্ন্তজাতিক দালাল মিডিয়া প্রচার করলো বাংলাদেশ একটি জঙ্গী দেশ যেখানে পরমাণু প্রকল্প ঝুকিপূর্ণ?
(১৩) শ্রীলঙ্কার এই হামলায় তার প্রতিবেশী দেশটি তাদের নির্বাচনে ইসলাম বিদ্বেষী রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ইতমধ্যে ব্যবহার করা শুরু করেছে, এর অন্তরালে কে বা কারা রয়েছে?
এবার প্রশ্নের উত্তরসমূহ নিজে নিজে অনুধাবন করলে বুঝা যায় ঐসব ঘটনার অন্তরালে প্রকৃত ঘটনা কি?
সুতরাং জামাতে দন্ডায়মান মুখোশধারী জুতা চোর যেমন কখনোই নামাজী হতে পারে না তেমনি নামাজীর ভান ধরে দাড়ি পাঞ্জাবি পড়লেই মুসলিম নয়। অথচ যুগে যুগে ধর্মের মোড়কে ইসলামকে কুলশিত করার জন্য খারেজীরা বিশ্ব শান্তি ও মানবতার জীবনাদর্শ তথা ইসলামকে সমগ্র বিশ্বের সামনে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভুলন্ঠিত ও কলঙ্কিত করে চলছে। প্রকৃতপক্ষে আইএসের সকল সদস্য ও সদস্যা আইএসে যোগ দেওয়ার আগে ইসলাম ধর্মের অনুসারী মানে মুসলিমই থাকে। কিছু নামধারী, মূর্খ, উগ্র ও স্বল্পবিদ্বান মুসলমান তাদের পাঁতা পাঁদে পা দিচ্ছে এবং ইসলামের অপব্যাখার শিকার হয়ে নিরিহ মানুষ হত্যায় লিপ্ত হচ্ছে। মাঝখানে বলির পাঠা হচ্ছে বাকী সমগ্র মুসলমানেরা আর সাধারণ জনগণ। কারন এই সকল মুসলিমগুলো যখন আইএস ও তথাকথিত অন্যান্য জঙ্গি দলে যোগ দেয় তখন তার দায়ভার অবধারিতভাবে ঐ সমগ্র মুসলমানদের পড়ে। এইভাবে বিশ্বব্যাপী ইসলামভীতি বাড়ার পাশাপাশি কলঙ্কিত হচ্ছে ইসলাম ধর্ম।
#ইসলামে_অমুসলিমদের_প্রতি_দায়বদ্ধতাঃ
প্রাচীনকাল হতেই ধর্মসমূহ কোনদিন একে অন্যের সহাবস্হানে ছিলো না, কোনদিন থাকবেও না। কারন, ধর্মের ভিত্তি হলো বিশ্বাস, কোন লজিক নয়। সহ-অবস্হানের জন্য সামান্য হলেও লজিক্যাল মিল ও লজিক্যাল কারণ থাকতে হয় যা একেবারেই অনুপস্থিত। প্রত্যেক ধর্মের লোকেরা বিশ্বাস করে যে তারা "সত্য পথে" রয়েছে এবং অন্যসকল ধর্মের লোকেরা "ভ্রান্ত পথে" আছে। ভ্রান্ত ও সত্য লজিক্যালী একমুখী নয়, বিপরিত মুখী। এতদসত্ত্বেও ইসলামে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানের দাবিদার প্রতিটি মুসলিমকে নির্দেশ দিয়েছেন পরমতসহিঞ্চুতা ও পরধর্মের বা ভিন্ন মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে। উদাহরণস্বরূপঃ
#আল_কুরআনের_আলোকে
(০১) আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা'য়ালা এরশাদ করেন- “তারা আল্লাহ তা‘আলার বদলে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনো গালি দিয়ো না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহ তা‘আলাকেও গালি দেবে, আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অতঃপর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি তাদের বলে দেবেন, তারা দুনিয়ার জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে {সূরা আল আন‘আম- ১০৮}।“
(০২)আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা'য়ালা এরশাদ করেন- "ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন [ সুরা মুমতাহিনা -৮]।"
(০৩) আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা'য়ালা এরশাদ করেন- "যে ব্যক্তি যে কোন মানুষকে হত্যা করার কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ (করার শাস্তি বিধান) ছাড়া (অন্য কোনো কারণে) কেউ যদি কাউকে হত্যা করে, সে যেন গোটা মানব জাতিকেই হত্যা করলো; (আবার এমনিভাবে) যদি কেউ একজনের প্রাণ রক্ষা করে তবে সে যেন গোটা মানব জাতিকেই বাঁচিয়ে দিলো (সূরা মায়িদা-৩২)।"
#সহীহ_হাদীসের_অালোকে
(০১) মুওতার যুদ্ধে রওনার প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাহিনীকে নির্দেশ দেন-"তোমরা কোনো নারীকে হত্যা করবে না, অসহায় কোনো শিশুকেও না; আর না অক্ষম বৃদ্ধকে। আর কোনো গাছ উপড়াবে না, কোনো খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দেবে না। আর কোনো গৃহও ধ্বংস করবে না [মুসলিম : ১৭৩১]।"
(০২) একাধিক সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- "সাবধান! যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব [আবূ দাঊদ : ৩০৫২]।"
(০৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ "যে মুসলিম কর্তৃক নিরাপত্তা প্রাপ্ত কোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার ঘ্রাণ পাওয়া যায় চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব থেকে [বুখারী : ৩১৬৬]।"
(০৪)রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে প্রথম বিচার করা হবে রক্তপাত সম্পর্কে (বুখারী,মুসলিম : ৩১৭৮)।
#ধর্মের_অন্তরালে_ভূরাজনীতি
জঙ্গি শব্দটা ভূ-রাজনীতিক এবং কৌশলগত শব্দ, যার মূলে রয়েছে ষড়যন্ত্রকারীদের অর্থনীতি পোক্ত করা এবং মুসলিমদের বলির পাঠা বানিয়ে ফায়দা লুটা। শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার সম্ভাব্য কারনসমূহ হলোঃ
ক) চীনা বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, স্টিং অব পালর্স বা মুক্তা’র মালার মাধ্যমে সাড়া বিশ্বকে সংযুক্ত করতে চাচ্ছে যার মুলে আছে দক্ষিণ এশিয়া। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মায়ানমার, শ্রীলংকা আছে এর মধ্যে। চীন মায়ানমারের রাখাইন, পাকিস্তানের বেলুচিস্তান এবং শ্রীলংকার হাম্বানটোটা বন্দরে চীন বিনিয়োগ করেছে। খেয়াল করলে দেখা যায় রাখাইনে রোহিঙ্গা হামলা হয়েছে, পাকিস্তানে বেলুচিস্তানে হামলা হয়েছে। আর এখন হল শ্রীলংকায়। এর মানে চীনা বিরোধী অক্ষ চাচ্ছেনা চীন দক্ষিণ এশিয়ায় তার আধিপত্য বিস্তার করুক। আগামী ২৭শে এপ্রিল, ২০১৯ শুরু হতে যাওয়া "ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড" সম্মেলনে শ্রীলংকার হামলা একটি বিশেষ বার্তা দিবে, তা নিঃসন্দেহেই বলা যায়।
খ) শ্রীলংকার হামলায় মুসলমানকে জড়ানোর কারণও খুব সোজা। একদিকে মুসলমানদের সন্ত্রাসী হিসেবে সাব্যস্থ করা, অন্যদিকে মুসলমানদের চাপে ফেলে ফায়দা হাসিল করা। কারন শ্রীলংকা ২০১৮ সালে ট্যুরিজম থেকে সাড়ে চার বিলিয়নের মত আয় করে যা ইতমধ্যে আশপাশের বৃহৎদেশ গুলোর মাথাব্যাথার কারন। এই দাবীকে সমর্থন করে আইএস কর্তৃক হোটেলে বিদেশীদের হত্যাকরন।
গ) শ্রীলংকার চীনপন্থী প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বলেছেন গোয়েন্দারা সতর্কবার্তা গোপন করেছেন। আর ভারতপন্থী প্রধানমন্ত্রী বিক্রামাসিংহে বলছেন তাকে কিছুই জানানো হয়নি। বাস্তবতা বলছে শ্রীলংকার ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিপরীতমুখী রাজনীতিবিদ, প্রসাশন ও পুলিশ ইচ্ছে করে উগ্রবাদী খারেজী জঙ্গিদের হত্যালীলার সুযোগ করে দিয়েছে যা দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দলে নির্দেশ করে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রে নিজেদের পছন্দের শাসক (পড়ুন গোলাম) বসাতে না পারলে মোড়লরা বিভিন্ন গোষ্টির উত্থান ঘটায় যারা সেই দেশে এরকম ঘৃণিত তৎপরতা চালাতে শুরু করে। টুইটার প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষনিক টুইট এবং নির্বাচনের কাজে শ্রীলঙ্কার ঘটনা ব্যবহার করার ভিতর দিয়ে এই সত্যটি উদ্ভাসিত।
মূলতঃ উপরোক্ত বিষয়বলী সাম্রাজ্যবাদীদের তৈরী সুদূরপ্রসারী পদ্ধতি যার মূলে রয়েছে চীনা বিরোধী অক্ষের মাস্টারপ্ল্যানারগণ। তারা মূলত নামধারী মুসলিমদের দিয়ে আল কায়দা, তালেবান ও আইএস ছদ্মবেশে সারবিশ্বে ইসলামোফোবিয়ার বিষ সুনিপুণভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এজন্য আমেরিকা নিয়েছে ‘পিভট ট্যু এশিয়া’ এবং আমেরিকার সহযোগী মোদির সরকার নিয়েছে ‘লুক ইস্ট’ পলিসি। চলছে দুই অক্ষের মধ্যে প্রক্সি ওয়্যার বা ছায়া যুদ্ধ। স্বার্থ নিয়ে যুদ্ধ করবে ঐ দুই অক্ষ আর ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই অঞ্চলের মানুষ, ঠিক যেভাবে আমেরিকা-রাশিয়ার প্রক্সি ওয়্যারে ধ্বংস হয়েছে আফগানিস্তান।
এখন কে বেনিফিশিয়ারি তা মেলানো যাক, এই ঘটনায় কার সবচেয়ে বেশি লাভ হল? আপতদৃষ্টিতে চীনের মুক্তার মালায় ক্ষত সৃষ্টির মাধ্যমে চীনাবিরোধী অক্ষ এই মুহূর্তে কিছুটা এগিয়ে তা খালি চোখেই বুঝা যায়।
#সবিশেষঃ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রীলঙ্কার সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে বলেছেন, "সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কোনো দেশ ও ধর্ম নেই। জঙ্গি জঙ্গিই, সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীই। এদের কোনো ধর্ম নেই। নেই কোনো দেশ-কাল-পাত্র।" আশংকার ব্যাপার এই যে সহসাই আগামী মে ০৬, ২০১৯ তারিখে পার্শ্ববর্তী দেশটির ফরেন সেক্রেটারি জরুরী সফরে ঢাকা আসছেন । তাদের উদ্দেশ্যও একই- বাংলাদেশকে ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ থেকে বিরত রাখা। তবে মনে হচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনার কূটনীতি ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কাছে তারা ব্যর্থ হবে! তাহলে কি পরবর্তী টার্গেট বাংলাদেশ? সৃষ্টিকর্তার নিকট একটাই প্রার্থনা; ভূ-রাজনীতির এই খেলায় বাংলাদেশ বেঁচে গেলেই হবে।

শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৯

শুভ নববর্ষ

অগ্নি স্নানে শুদ্ধ করি
মম হৃদয় হেরী।
বৈশাখের ঐ রুদ্র ঝড়ে
ভাসাই মনের কালি।
মঙ্গল জলে শুচি হই
ফেলে পাপের ঝুড়ি।
মম বাংলা হিয়ায় একতারা সুর
আমি গর্বিত বাঙ্গলী।



প্রভাতী পান্তা ভাতে কাচা লঙ্কা
সরষে ইলিশের ঘ্রাণে মাতোয়ারা।
বাঙ্গলীর ঘরে ঘরে পহেলার প্রাণ
ধুয়ে মুছে সাফ হয় মনের ঝঞ্জাল।

শুভ নববর্ষ ।

রঙ্গকাল

অামি মহাকাল

অামি অাকাশ অামি পাতাল অামি সুউচ্চ অামি পতিত। অামি নম্র অামি লৌহ অামি হার অামি বিজিত। অামি হাস্য অামি অশ্রু অামি মিলন অামি বিরহ। অাম...