বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

হতভাগ্য প্যান্ডোরা

তুমি হেফাস্টাসের অপূর্ব সেই চির ভাস্কর্য
আফ্রদিতির নারী সৌন্দর্যের স্বর্গীয় বিমূর্ত।
তুমি এথেনার মিহি মসলিনের রুপালি থান
তুমি জিউসের হতে অনুগৃহীত অমূল্য প্রাণ।

অ্যাপোলোর কণ্ঠে তুমি সঙ্গীতের মূর্ছনা।
হারমিসের নিত্য রূপে আবেগী প্ররোচনা।

রূপের মুক্তো গলে,  অঙ্গে বাহারি  পোশাক
তোমায় দেখে  মর্ত্য- দেব্য সকলই হতবাক।
শীর্ষে তোমার স্বর্ণমুকুট, গ্রীবায় পুষ্প মালা
বিধাতার সৃষ্ট প্রথম মানবী, তুমি প্যান্ডোরা।


হে কুমারী প্যান্ডোরা-

কার ইশারায় এলে ধরায়  লজ্জাবতী কিশোরী?
ঐ ভুবনময়ী রূপে লুকিয়ে থাকে কার অভিসন্ধি ?
ঐ ঘোমটা টানা উজ্জল মুখে কার কূটচালের সিদ্ধি ?
এপিমিথিউস কেন হয়ে পড়ল ঐ রূপের বন্দী ?


দেব আর মানবীর মিলনে সৃষ্টি মানব  সংসার
পৃথিবীতে নেমে এল সকল স্বর্গ-সুখের দুয়ার
পিতা কন্যাকে তত্ত্বে  দিলো  কি 'অদ্ভুত বাক্স'!
চাবি সহিত চিরকুট  ‘কখনো খুলো না যেন!'

নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি মানবের চিরন্তন আকর্ষণ
নিয়ম ভাঙ্গাই যেনো পৃথিবীর একমাত্র নিয়ম।
পিতার কূটকৌশলে কৌতুহলের খুলল ঝাঁপি 
ব্যাপন হোল ধরার বুকে সমস্ত অশুভ শক্তি।

লোভ-লালসা-ঈর্ষা-ব্যাধি-ঘৃণা-ক্রোধ-জরা-হতাশা
ছড়ায় সারা ধরণীতে, মানবের দেহে বাধে বাসা।
ক্রন্দন-জরায় খুলে বাক্স আশাবিহীন প্যান্ডোরা
এবার উজ্জ্বল হাসি দিয়ে বেরুয় সবচেয়ে শুভতা।

সকল অশুভ আর শুভতায় বেঁচে রইল প্যান্ডোরা
ঐ শুভতায় প্রতিটি মানবের বুকে বেঁচে থাকে আশা ।
প্যানডোরা তোমার নারী সুলভ একটু কৌতূহলে
সারা অশুভের ভর আজো  মানব জাতির কাঁধে।

জিউসের ফাঁদে মানবের অনিষ্ট তবু তিনি  অধরা
নিছক কৌতূহলে 'অনিষ্টের মা' বেচারি প্যানডোরা!
প্যানডোরার বাক্স নারী চির অশুভের কৌতূহল কি?
নাকি পুরুষকেন্দ্রিক অতিমাত্রিক কূটচালের সৃষ্টি ?

হায় শ্বাশ্বত প্রথম হতভাগী নারী প্যান্ডোরা!
তুমি করোনি কখনো পুরুষের  বিরুদ্ধাচরণ।
তুমি ছিলে বিশ্বস্রষ্টার দেওয়া সকলের উপহার, 
তবু পুরুষতন্ত্র করলো তোমায় অবজ্ঞার  দুয়ার।

মঙ্গলবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

আমাদের বসুন্ধরা


হে প্রিয় নবীন অভিরুপ
পুর্বপুরুষের অনন্য সৃষ্টি।
অনুরাগে রেখো আচ্ছন্ন 
বিমোহে আশার বসতি।

তার ঘুম আস্যের হাসির বাঁকে
আমার হৃদয় চেতন হেঁলেদুঁলে। 
আনন্দময়ীর আগমনে-
কি আনন্দ এ সংসারে!

মায়ার বাধন

আমার এই অস্তিত্বের পথ মাড়িয়ে
স্মৃতির গল্পরা সবাই ধূলোয় মিশে।
কিছু সমন্বয় ও অনিশ্চিত হিসাবে
মহাকালের বুকে সবাই যায় ক্ষয়ে।

অবিরাম আমি প্রাপ্তির অঙ্ক কসি
কখনোবা জীবনের হিসাব মিলে।
অথবা প্রভেদে চাওয়ার সাঙ্গ হয়
ইচ্ছেগুলো মিশে যায় মহাকালে।

তবু এই পরিভ্রমণে কত্তো যে সুখ
পাওয়া না পাওয়ার ব্যাবধানে।
কপোত যুগলের উৎকৃষ্ট নীড়
প্রিয় সংসার আর মায়ার বাধনে।

বেশঃ মনোরম এই বেঁচে থাকা
আমি ও আমাদের সংসারে!

শিশু জাতিস্মর

শিশু সুখ, শিশু মুখ
শিশু স্বর্গ, শিশু সত্য।

শিশু আদি, শিশু অনন্ত
শিশু স্নিগ্ধ, শিশু শ্বাশত।

শিশু কোমল, শিশু স্পষ্ট
শিশু সুন্দর, শিশু মোহ
শিশু শ্বর, শিশু জাতিস্মর।

সে আসবে বলে!

পদ্মকলির যৌবনা দেহ জলে মিশে-
ধুয়ে যায় বৃথা নপুংসক নিথর জলে
তার দেহবৃন্তের প্রতিটি পাপড়ি অাজ
অনাদরে এলোপাথাড়ির অবেলায়।
..........................................
এদিকে-
অরুণের এক পশলা তরুণ মেঘ
হংসবলাকার সফেদ ডানায় চড়ে
পাড়ি দেয় ঝিনুকের মালার দেশ
খুঁজে ফিরে আরধ্য নীলকমলিনী।
..........................................


সহসা, অরুণের কানে ভেসে অাসে-
এই এই এই, এই তো আমি----

নির্লিপ্ত অপরাহ্ন কে ডাকে ঐ-
শুনে সে কার আহ্বান?
ধরিত্রীর সকল রং কে আসে হায়!
এই চেতনায় কে মিশে যায়?
কে সে উদগ্রীব ডাকে আমায়?
কে ভাসায় আমায় কোন ঠিকানায়?
..........................................

পদ্মকলির ইন্দ্রিকোণে তরুণ মেঘের ফুঁ
উষ্ণ হয়ে অঝোরে ঝরে তার দেহবৃন্তে
জলের পরাগায়ণে সে আর মেঘ বৃষ্টি-
ধুয়ে মুছে সাফ হয় দুপ্রাণের অাকুতি।
..........................................

ধাঁ করে তরুণ মেঘ ধূম্র হয়
হংসবলাকার পাখনায় মেলে
পৌঁছে মেঘ বাড়ির ঠিকানায়।
এদিকে কমলিনীর প্রতীক্ষা-
কখন সে আসবে বলে!

সব কুসুম যদি যায় ঝরে!

আবির তুই সবি কখন?
বল মায় দিব্যি করে।
শেষ বেলায় লাভ কি বল-
সব কুসুম যদি যায় ঝরে!

বির এসে বলে তাঁকে-
কই ছিলি তুই কোন বাঁকে?
ছুতে তোর সিঁথির কোণ-
কত রাত বিরহে কাটে!

-ঃঅপদার্থের অমনিবাসঃ-


আচার্য কলিপের হাজার বছরের পুরোনো জ্যোতিষ বিদ্যায়
তন্ন তন্ন করে খুজেছি আমাদের আহুত ভবিষ্যৎ।
এনাক্সিমেন্ডারের সৃষ্টিতত্বের পরিনত অনুরাগে ভেসে বেড়াই নিরন্ত
তবু অদৃষ্টের মহাকাল কেমন যেন রাহুগ্রহে আচ্ছন্ন।

কল্পনার অন্তিম ঠিকানায় আশ্রয় খুজতে খুজতে
একতরফা মাত্রায় ঘুরছি কোপার্নিকাস নভোমন্ডলে।
দমের অণুবল খুজতে গ্যালিলিও-র বলবিদ্যা করেছি কাটাছেরা
তবু লবডঙ্কার অন্তঃকরণে অন্তঃকলহ, কি যে পাওয়ার নেশা!

ভুঁইফোঁড়ের অহেতুক কর্ষে নিউনের মহাকর্ষ খুজে পাইনি
গতিসূত্রের অনিঃশেষ নিয়মে খর্খরে মননের হয়নি গতি।
উপলব্ধ চৈতন্যের পরম ভর আর আইনিস্টেনর আপেক্ষিকতা
যেন রাম আর ঘটিরাম; কি যে এক লেজেগোবরে অবস্থা!

এডুইন হাবলের দূরবীনে দেখেছি অস্থিত আকাশগঙ্গা, নিহারিকা
প্লাঙ্কের ফোটন তত্ত্বে পাইনি অনুভবের বিকিরিত সীমারেখা।
সাসকিন্ডের 'তার-তত্বে' কৃষ্ণ গহ্বরের গভীরতা যতটা শাশ্বতে
আদমীর হৃদয়ের গভীরতা বুঝতে আদম ততটাই নটঘটে।

মহাকালের পলক দৃশ্যে রঙ্গমঞ্চের চোতা নৃত্য
অরুণ মিলায় ইশ্বরি কণায় সৃষ্টি-ধ্বংসের নাট্য।
আত্মা দিকবিদিক শুন্য হকিংয়ের মহাবিস্ফোরণে
মহাজাগতিকের স্পৃহায় সে হারায় দূর হতে বহুদূরে।

-: কবিতার প্যারাডক্স :-

তুমি আছ, আমি আছি, আমরা আছি
অথবা কেউ নেই, সবাই শূন্যে
কালের প্রতিটি পাতা হয়তোবা সাজানো 
সৃষ্টধরের নিপুণ তুলির আঁচরে।

এই ধরো ত্রিমাত্রিক কাগুজে পোকার মতোই
নির্দিষ্ট আবর্তে আমার জীবন,
আর তুমি থাক দশমাত্রিক জগতের অসীম বলয়ে
যেখানে ইচ্ছে তোমার বিচরণ।

বলতো কবিতা-

আমি বাদে আর কয়টা মাত্রায় তুমি আসো?
ঐসব মাত্রায় সবাই কি আমার মতোই বিনিদ্র?
তারাই বা কয়মাত্রিক কবিতার পূজারী?
চার, পাঁচ, ছয়, সাত নাকি আরো বেশী?

এককোষী অনুজীব হতে বহুকোষী বৃহদাকার
তোমার অন্তিকে সব হয় অস্তিত্ত্বহীন অনুজীব
বিস্মৃত গোলক আর মহাকালের মহামায়ায়
কবিতা তুমি বিলীয়মান হও প্যারাডক্স ধাঁধায়।

কবিতা, জানি তুমি আবার আসবে-

অদৃষ্ট কালে তুমি আসবে এই পরমাত্রিক হৃদয়ে
এবার আসবে অন্য এক পরবাস্তব কবিতা হয়ে।
সেদিন আমার বিচরন হবে দশমাত্রিক অসীম বলয়ে
আর হয়ত তুমি থাকবে ত্রিমাত্রিক জড় বস্তুর খাঁজে।

সেদিন তোমার কশেরুকাবিহীন অস্তিত্বে
হামাগুড়ি দিয়ে তোমার দেহের ঘ্রাণ নিবো।
সেদিন ত্রিমাত্রিক তুমি, আমায় ছুঁয়ে দিতেই
হারিয়ে যাবো তোমার চোখের প্যারাডক্সে।

আহা কবিতা!
বাস্তব আর পরাবস্তবতার মায়াজালে
আমরা এত কাছে, তবু কতই না দূরে!

সেদিন আমাদের কুটাভাসে-

আমি হবো বিচ্ছিন্ন, আবার আমিই আচ্ছন্ন।
আমি হবো সুস্থির, আবার আমিই অস্থির।
আমি হবো ক্ষুদ্র, আবার আমিই ব্রহ্মাণ্ড।
আমি হবো তুমি, আবার তুমিই আমি!

একুশ সূর্য

মায়ের ছেলেরা একুশের দ্বীপ্রহরে
১৪৪ ধারা কে বাংলার পায়ে পিশে।
বাংলা একাডেমিতে স্লোগানে মুখরিত,
দাবী একটাই- "রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই।"

হায়েনা বাহিনীর বিষাক্ত কার্তুজে
রফিক, শফিক, জব্বার প্রমূখের
বুকের কোটর হতে ঠিকরে পড়ে,
সবুজ বাংলার রুধির লালসূর্য।

মুক্তি পাগল ফিনিক্স পাখির মতই
কোটি বাঙ্গালীর ঘুম ভাঙ্গা মিছিলে-
উড়ায় লাল সবুজের স্বাধীন কেতন
বিশ্বের বুকে সৃষ্টি অনন্য বাংলাদেশ!

একুশ সূর্যে বিশ্ব জাতি হয় অালোকিত
শত কোটি প্রাণের বাজে বিল্পবী কণ্ঠ।
অমর একুশে কেপে উঠে বিশ্বদরবার
সকল কণ্ঠে মাতৃভাষার দৃঢ় অঙ্গিকার।

চকের পোড়া ক্ষত



নিমতলী হতে তাজরীন
এবার এলো চকবাজার
ওদের মরণে কে দায়ী?
দগদগে পোড়া বাংলা
নাকি মৃত্যুর ফেরেস্তা?
একে একে পোড়া ক্ষত বাড়ে
চক বাজারের লাশের মিছিলে।
রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভোর ঘুমে পড়ছে ডাঁক
ষোল কোটি হৃদয় অাজি পুড়ে খাঁক।

রঙ্গকাল

অামি মহাকাল

অামি অাকাশ অামি পাতাল অামি সুউচ্চ অামি পতিত। অামি নম্র অামি লৌহ অামি হার অামি বিজিত। অামি হাস্য অামি অশ্রু অামি মিলন অামি বিরহ। অাম...