বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এর তাৎপর্য

বাঙ্গালী জাতীর উন্নয়নের অন্তরায় ঘটাতে ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হায়েনা ও বাংলার মিরজাফরের দল (রাজাকার, অালবদর, অাল সামস্, শান্তি কমিটি, নকশাল বাহিনী) এর সম্মিলিতে বেয়নেটের মাধমে কোটি বাঙ্গালির শ্রেষ্ঠ সন্তানদিগকে নির্মম ভাবে হত্যা করার প্রতীক হিসেবে শোকের বুদ্ধিজিবী দিবস কে হৃদয়ের  অন্তঃস্থল হতে ও সজ্জল নয়নে স্বরণ করছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আগমুহূর্তে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে রাতে তুলে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। আকাশে জ্যোতিষ্করাশির মতো চিরসমুজ্জ্বল কয়েকজন মানুষকে শোকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করার জন্য বছরে একটি দিন 'শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস'রূপে পালনের নজির বিশ্বের অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। ভবিষ্যতের জন্য বাঙালি জাতিকে মেধা ও মননে পঙ্গু করে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এই দানবীয় পাপাচার সংঘটিত হয় এবং তা অত্যন্ত পৈশাচিক বর্বরতার সঙ্গে।

সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি মরমী জহির রায়হান, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশেদুল হাসান, আনোয়ার পাশা, সিরাজুদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামউদ্দীন আহমেদ, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ফজলে রাব্বী, আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীন সহ প্রমুখ শহীদ বুদ্ধিজীবীকে যারা বেঁচে থাকলে অাজ হয়ত বাঙ্গালী জাতীর অন্য ইতিহাস লেখা হত। 

এ বছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের বড় একটি তাৎপর্য হলো, চার দশক বিলম্ব হলেও মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারে দণ্ডিতদের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত প্রধান ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে; আগে আবদুল কাদের মোল্লা ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের এবং গত মে মাসে মতিউর রহমান নিজামীর। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যপ্রবাসী চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আশরাফুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে, তাদের দেশে এনে তা কার্যকর করতে হবে। 


তবে এই দিবসে সবথেকে চমকপ্রদ ও অাশার কথা মনে হচ্ছে  তাবেদার বাহিনী জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা ও বুদ্ধিজীবী হত্যায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী দলটি সম্প্রতি  বলেছে, ‘এই দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।’ প্রকারান্তরে তারা তাদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছে, এখন তাদের উচিত মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি হতে স্ব স্ব অব্যহতি নেয়া নতুবা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের শক্তির সাথে সক্রিয় অংশগ্রহন করে এটাই অাদতে প্রমাণ করা যে তারা তাদের চরিত্রগত পরিবর্তন এনেছে।  অার সেটাই হতে পারে শহীদ বুদ্ধিজিবীগনের অাত্মার প্রতি যথাযথ সন্মান প্রদর্শ (অাপতদৃষ্টিতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সন্তোষজনক ভাবেই সরকার বুদ্ধিজিবী হত্যার অপরাধীদের বিচারের অাওতায় দন্ড দেওয়া হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে যদিও তা এখনো সীমিত পরিসরে যেখানে অারো ব্যাপকতা প্রসারের প্রয়োজন অাছে বলে মনে হয়)।


তাছাড়া অামরা বর্তমান তরুণ প্রজন্ম অামাদের জ্ঞান, মেধা ও মননের চর্চা এবং উন্নত চেতনা ধারণা তথাপি তার প্রতিফলনের মাধ্যমেই কেবল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি যথার্থ সম্মান দেখাতে পারি। এদিনের প্রতিপাদ্য তথা প্রতিজ্ঞা হোক "জ্ঞান, মনন, বুদ্ধিবৃত্তি ও মুক্তচিন্তা চর্চার প্রতিরূপ "। সকল শহীদ বুদ্ধিজিবগণের অাত্মার মাগফেরাত কামনা ও তাঁর শোকসপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি (অামিন)।

কোন মন্তব্য নেই:

রঙ্গকাল

অামি মহাকাল

অামি অাকাশ অামি পাতাল অামি সুউচ্চ অামি পতিত। অামি নম্র অামি লৌহ অামি হার অামি বিজিত। অামি হাস্য অামি অশ্রু অামি মিলন অামি বিরহ। অাম...